নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেলে অনেক সময়ই আতঙ্কে নিকট স্বজনরাও মৃত ব্যক্তির কাছে যাননি। লাশ দাফন থেকেও অনেকে ছিলেন দূরে। কিন্তু এসব দুঃসাহসিক কাজে পিছিয়ে ছিলেন না বাংলাদেশ পুলিশের অনেক মানবিক কর্মকর্তা বা সদস্যরা। যাদের মধ্যে অগ্রগামী একজন হলেন- কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার ওসি এসএম আরিফুর রহমান (৪২)। সেই মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা আরিফুর শেষ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ বিসর্জন দিলেন।
গতকাল গভীর রাতে রাজধানীর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পুলিশের এই মানবিক কর্মকর্তা। এ নিয়ে বর্তমান করোনাকালে জনগণকে সুরক্ষা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ৭২ জন গর্বিত সদস্য শাহাদাত বরণ করেছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আরিফের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রাণঘাতী করোনাকালে আতঙ্কে যখন সবাই সবাইকে এড়িয়ে চলছে, তখন নির্ভয়ে করোনা আক্রান্ত রোগী ও দুস্থ মানুষের পাশে প্রত্যক্ষভাবে দাঁড়িয়েছিলেন ওসি এসএম আরিফুর রহমান। কিন্তু করোনাযুদ্ধের এই সম্মুখযোদ্ধাকে অবশেষে প্রাণ হারাতে হলো। একমাত্র শিশুকন্যার বাবা এই পুলিশ কর্মকর্তা আরিফুরকে হারিয়ে এখন শোকের সাগরে ভাসছে তার পরিবার। স্বজন-সহকর্মীসহ দৌলতপুরের সাধারণ মানুষের মাঝেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পুলিশ সদর দফরও তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জানান, করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাত পৌনে ১১টায় মারা যান পুলিশ পরিদর্শক আরিফুর রহমান। তিনি কর্তব্যরত অবস্থায় শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ১৪ আগস্ট কুষ্টিয়ার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ওই দিন রাতেই কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি এই সম্মুখ করোনা যোদ্ধাকে।
এআইজি সোহেল রানা জানান, আরিফুর রহমান ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এসআই (নিরস্ত্র) পদে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট খুলনা রেঞ্জে যোগদান করেন। এরপর ওই বছরের ৩১ আগস্ট যোগ দেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার ওসি হিসেবে। তিনি একজন পেশাদার পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি পিতা, মাতা, স্ত্রী ও এক বছর বয়সি শিশুকন্যাসহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আরিফ ১৯৭৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনার রূপসা থানাধীন সামন্তসেনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পুলিশ সদর দফতর জানায়, পরিদর্শক আরিফের প্রথম জানাজা কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাংলাদেশ পুলিশের ব্যবস্থাপনায় মৃতদেহ খুলনায় গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। সেখানে ধর্মীয় বিধিবিধান অনুযায়ী পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।